কম্পিউটার ফান্ডামেন্টাল
কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার একটি অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা প্রোগ্রামিং এবং সফটওয়ার দ্বারা পরিচালিত হয়। অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র যেমনঃ রেডিও, টেলিভিশন, ভিসিআর, ইলেকট্রনিক ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, ফ্যাক্স ইত্যাদি থেকে কম্পিউটার সম্পূর্ণ ভিন্ন এক যন্ত্র। কম্পিউটারকে দিয়ে সব ধরনের কাজ করানো যায়। অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রের সাহায্যে দুই একটির বেশি কাজ করানো যায় না। কিন্তু একটি মাত্র কম্পিউটারের সাহায্যে চাহিদানুযায়ি প্রোগ্রাম তৈরীর পর তা ইন্সটল করে নির্দেশ মোতাবেক অনেক ধরনের কাজ করা যায়। কম্পিউটারের প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হলোঃ-
এক- কম্পিউটার তার মেমোরীতে কোন নির্দেশনা (সফটওয়ার / পোগ্রাম) এবং লক্ষ লক্ষ তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারে।
দুই- অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ও নির্ভূলভাবে নির্দেশিত নির্দেশসমূহ পালন বা তথ্য প্রক্রিয়া করতে পারে।
কম্পিউটারের প্রাথমিক ধারনাঃ
কম্পিউটার শব্দটি Computer (গ্রীক শব্দ) থেকে এসেছে। কম্পিউটার শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। পূর্বে কম্পিউটার দিয়ে শুধুমাত্র হিসাব নিকাশের কাজই করা হতো। কিন্তু বর্তমান অত্যাধুনিক কম্পিউটার দিয়ে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে জটিল হিসাব নিকাশের কাজ নির্ভূলভাবে করা ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের অফিসিয়াল ও বিনোদন মুূলক কাজ করা যায়। কম্পিউটার সেকেন্ডের মধ্যে কোটি কোটি হিসাব নিকাশ করতে পারে। কম্পিউটারে কাজ করার গতি হিসাব করা হয় ন্যানোসেকেন্ডে। ন্যানোসেকেন্ড হচ্ছে এক সেকেন্ডের একশত কোটি ভাগের একভাগ সময় মাত্র।
কম্পিউটারের অভ্যন্তরে রয়েছে অনেক বর্তণী, বাস, ট্রানজিস্টার, ইনট্রিগ্রেটেড সার্কিট, চিপ এবং এগুলোর ভিতর দিয়ে যখন ইলেট্রিসিটি প্রবাহিত হয় তখন তা নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে কম্পিউটার পরিচালনা করা হয়। ইলেকট্রনিক সংকেতের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে কম্পিউটার ল্যাংগুয়েজ বা কম্পিউটারের ভাষা। কম্পিউটারের বোধগম্য এ ভাষার মাধ্যমে কম্পিউটারে যে নির্দেশ দেয়া হয় তারই ভিত্তিতে কম্পিউটার ফলাফল প্রদান করে। কম্পিউটারের এ নির্দেশাবলীকে বলা হয় প্রোগ্রাম। প্রোগ্রাম ছাড়া কম্পিউটার একটি জড় পদার্থ ভিন্ন আর কিছইু নয়। উপযুক্ত প্রোগ্রামের প্রভাবে কম্পিউটার জড় পদার্থ হতে গানিতিক শক্তি সম্পন্ন বুদ্ধিমান যন্ত্রে পরিণত হতে পারে।
কম্পিউটার ও মানুষের মধ্যে পার্থক্যঃ
মানুষ মানুষ-ই। সৃষ্টির সেরা মানুষ। মানুষের সাথে কোন কিছুরই তুলনা হতে পারে না। কম্পিউটার-ই একমাত্র যন্ত্র যার কার্যপদ্ধতি মানুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যেমনঃ ৭X৯ = কত ? এটি প্রশ্ন আসলে চোখ দিয়ে দেখে কিংবা কেউ জিজ্ঞেস করলে কান দিয়ে শুনে মস্তিষ্কে যায়। মস্তিষ্কে পূর্বে মুখস্থ করা জ্ঞানের ভিত্তিতে হিসেব করে কাগজে লিখে ৬৩ অথবা মুখে বলে তেষট্টি। এখানে চোখ বা কান দ্বারা সমস্যা (তথ্য) মস্তিষ্কে পৌঁছানোর পর মস্তিষ্কে এটিকে প্রক্রিয়া করে হাত বা মুখ দ্বারা ফলাফল প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে চোখ বা কান ইনপুট হিসাবে, মস্তিষ্কে কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ হিসাবে এবং মুখ বা হাত আউটপুট হিসাবে কাজ করে। কম্পিউটারেও অনুরূপ ইনপুট ডিভাইস কী-বোর্ড হতে ৭X ৯ টাইপ করে দিলে মনিটরে ৬৩ কিংবা প্রিন্টারে কাগজে ছাপায়ে ৬৩ আসবে। ৭X৯ টাইপ করে দিলে তা প্রথমে সিপিইউ-তে যায়। সিপিইউ-এর মেমোরীতে রক্ষিত পোগ্রামের ভিত্তিতে ফলাফল আউটপুট ডিভাইস মনিটর কিংবা প্রিন্টার যন্ত্রের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এ তো গেল সাধারণ একটি গুণের কথা। যদি খুব জটিল যেমন ১০৭৯৯৮৯ X ২০৭.৯৫৭৯ + ৯৭৯৫৮ + ১.০৯৭৯৮ / ০৭৯৯৯৮৫ X.০৭৯৮৭৫৬১৩ = কত ? এ অংকটি মানুষের করতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু কম্পিউটার সেকেন্ডের চেয়েও অনেক কম সময়ে করতে পারবে। এ তো গেল শুধু হিসাবের কথা। এ ছাড়াও কম্পিউটার শত শত মানুষের বিভিন্ন রকম কাজ একা খুব দ্রুত নির্ভূলভাবে করতে পারে। যেমন এস এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৫/৬ লক্ষ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেল তা বাছাই করতে যেখানে মানুষের অনেক সময় লাগে সেখানে কম্পিউটার মাত্র ২/৩ মিনিটে তা করে দেবে। কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা মানুষের চেয়ে অনেক গুন বেশি। কর্মক্ষেত্রের পরিধি মানুষের চেয়ে অনেক বিশাল হওয়া সত্তে¡ও কম্পিউটার মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান নয়। কম্পিউটারের নিজস্ব কোন বুদ্ধি নেই। আগে থেকে কম্পিউটারের মেমোরীতে দেয়া নির্দেশের ভিত্তিতে কম্পিউটার কোন সমস্যার সমাধান করে থাকে। মানুষের মত কম্পিউটারের উদ্ভাবনী শক্তি (আই, কিউ) নেই। মানুষ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কম্পিউটারকে কি করতে হবে, কিভাবে করতে হবে ইত্যাদি নির্দেশনা আগে থেকে দিয়ে দেয়। কম্পিউটার শুধুমাত্র প্রোগ্রামে দেয়া নির্দেশমত অতি দ্রুত কাজ করে, তার কমও না বেশিও না। প্রোগ্রামে দেয়া নির্দেশ ভুল থাকলে কম্পিউটারও ভুল ফলাফল দেয়।
কম্পিউটার আবিষ্কারের কথাঃ
কম্পিউটার একজনে বা একক ভাবে কেউ আবিষ্কার করেনি। যুগে যুগে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের চেষ্টা ও সাধনার ফলে আজকের আধুনিক কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয়েছে এবং আরো অত্যাধুনিক কম্পিউটার আবিষ্কারের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি / প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই কম্পিউটার আবিষ্কার জানতে হলে প্রথম থেকে আলোচনা করতে হবে। প্রথম আবিষ্কৃত গণনাকারী যন্ত্রের নাম ইতিহাস ঘেটে যতটুকু জানা যায় প্রায় চার হাজার বৎসর পূর্বে চীনাদের তৈরি অ্যাবাকাস নামক গণনাকারী যন্ত্রটিই প্রথম গণনাকারী যন্ত্র। যাকে কম্পিউটারের পূর্বপুরূষ বলা হয়। সে হতে আজ অবধি অনেক পর্যায় অতিক্রম করে বর্তমান আধুনিক কম্পিউটার আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আধুনিক কম্পিউটারের মৌলিক রূপরেখা তৈরি করেন বৃটিশ গণিত বিশারদ চার্লস ব্যাবেজ। ১৮৩৩ সালে তিনি পূর্ব প্রজন্মের সকল যন্ত্র গণকের জন্য স্মৃতিভান্ডারের প্রযোজনীয়তা উপলব্ধি করে ”অ্যানালিটিকেল” নামক একটি যন্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করেন। বিভিন্ন কারণে তার এ প্রচেষ্টা বাস্তব রূপদান সমর্থ না হলেও তার এ পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করেই আজকের আধুনিক কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয়েছে। এ কারণে চার্লস ব্যাবজকে কম্পিউটারের আদি পিতা বা কম্পিউটারের জনক বলা হয়ে থাকে। চার্লস ব্যাবেজের পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা পরবর্তীকালে এ বিষয়ে গবেষণার পথ উম্মোচিত করেছে। পরবর্তীতে লেডি অ্যাডা আগাষ্টা, ফ্যাঙ্ক বন্ডইউন সহ আরো অনেকে তার পথিকৃৎ হয়ে এ বিষয়ে নিজ ধারনার বিকাশ ঘটান।
১৮৮৭ সালে ডঃ হারম্যান হলেরিথধ যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারী কাজে ব্যবহারের জন্য ইলেকট্রো মেকানিক্যাল ব্যবস্থায় পাঞ্চকার্ডের সমন্বয় ঘটিয়ে একটি তথ্য প্রক্রিয়াকরণের যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এ যন্ত্রের সাহায্যে দ্রুত আদমশুমারীর রিপোর্ট তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। ১৮৯৬ সালে হলোরিথের এ যন্ত্র তৈরির জন্য ”হলোরিথ টেবুলেটিং মেশিন কোম্পানি” নাম দিয়ে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এ জাতীয় আরো কয়েকটি কোম্পানি মিলে বিখ্যাত কম্পিউটার প্র¯ত্ততকারী প্রতিষ্ঠান ”ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন কর্পোরেশন সংক্ষপে আই বি এম এর জন্ম হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক হাওয়ার্ড এইচ. আইকেন আই, বি, এম এর চারজন প্রকৌশলীর সহযোগিতায় ১৯৪৪ সালে মার্ক-১ নামে প্রথম স্বয়ংক্রিয় সাধারণ ইলেকট্রোমেকানিক্যাল ডিজিটাল কম্পিউটার তৈরি করেন। মার্ক-১ ছিল ৫১ ফুট লম্বা, ৮ ফুট উচু। এতে ৭ লক্ষ যন্ত্রাংশের জন্য ৫০০ মাইল লম্বা তার ব্যবহার করা হয়েছিল। এর ওজন ছিল ৫ টন। যন্ত্রটি ১৫ বছর চালু ছিল। এখন এটি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে।
১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ জন মউসলি এবং তার এক ছাত্র প্রেসপার একার্ড নামে তৈরি করেন প্রথম প্রজন্মের ডিজিটাল কম্পিউটার। আকারে এ কম্পিউটার ছিল বৃহৎ। ওজন ছিল প্রায় ৩০ টন। এনিয়াক প্রতি সেকেন্ডে ৫০০০ যোগ বিয়োগ করতে পারত।
১৯৪৬ সালে হাঙ্গেরীয় গণিতবিদ জন নিউম্যান ”সংরক্ষিত পোগ্রাম” ধারণাটি উদ্ভাবন করেন। তিনিই প্রথম কম্পিউটারের ”তথ্য ও নির্দেশ” সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করেন। তার ধারণাকে কাজে লাগিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মরিশ উইলকশ ১৯৪৬ সালে সত্যিকারের সর্বপ্রথম স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক্স ডিজিটাল কম্পিউটার প্র¯ত্তত করেন।
এরপর জন মউসাল ও প্রেসপার একার্ড নিজেদের কোম্পানিতে ১৯৫১ সালের মার্চ মাসে ইউনিব্যাক-১ তৈরি করেন। এটিই হল সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি এলেকট্রনিক কম্পিউটার। এ কম্পিউটারে ক্রিষ্টাল ডায়েটে স্যুইচ এবং ভ্যাকিউম টিউব সার্কিট ব্যবহার করা হয়। এ কম্পিউটারের উলেলখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল এটি একই সঙ্গে পড়া, গণনা এবং তথ্য লেখা এর কাজ করতে পারতো।
১৯৪৮ সালে ট্রানজিষ্টর আবিষ্কৃত হওয়ার পর কম্পিউটারে বালবের বদলে ট্রানজিষ্টারের ব্যবহার শুরু হয়। ট্রানজিষ্টর ব্যবহ্রত কম্পিউটাগুলো আকারে ছোট হয়ে যেতে শুরু করে। এ কম্পিউটারগুলো আগের কম্পিউটার অপেক্ষা উন্নত ছিল। আগের মত এগুলো ঘন ঘন নষ্ট হতো না এবং কাজও করতো আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে। ট্রানজিষ্টর ব্যবহ্রত এ কম্পিউটারকে দ্বিতীয় প্রজম্নের কম্পিউটার বলা হয়। এদিকে কম্পিউটারকে নির্দেশ দেয়ার উপায় ও সহজ হয়ে গেল মেশিন ল্যাংগুয়েজের জায়গায় হাই লেভেল ল্যাংগুয়েজ এসে পড়ায়। কারণ ইতোমধ্যে দুইজন বিজ্ঞানী বেসিক নামের কম্পিউটার পোগ্রাম করার ভাষা উদ্ভাবন করেন। এ ভাষায় পোগ্রাম লিখা খুবই সহজ। ফলে এটি খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
ট্রানজিষ্টারের পর আসে আইসি এর ব্যাবহার। সিলিকন বা সেমিকন্ডাক্টর এর একটি ক্ষুদ্র অংশে একাধিক ট্রানজিষ্টর সন্নিবেশিত করা হলে তাকে বলা হয় আইসি বা সমন্বিত সার্কির্ট। আইসি ব্যবহার করে তৈরি হল নতুন প্রজন্মের কম্পিউটার। এগুলোর আকার হল পূর্বের চেয়ে অনেক ছোট এবং পাশাপাশি বেড়ে গেল গুণগত মান। দ্রুততর হল কাজের গতি। আইসি ব্যবহ্রত কম্পিউটার গুলোকে তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার বলা হয়।
কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় বিপ্লব ঘটে মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে। একটি ক্ষুদ্র অংশে একাধিক ট্রানজিষ্টর সন্নিবেশিত করা হলে তাকে বলা হয় আইসি বা সমন্বিত সার্কিট। আইসি ব্যবহার করে তৈরি হল নতুন প্রজন্মের কম্পিউটার। এগুলোর আকার হল পূর্বের চেয়ে অনেক ছ্টো এবং পাশাপাশি বেড়ে গেল গুণগত মান। দ্রুততর হল কাজের গতি। আইসি ব্যবহৃত কম্পিউটার গুলোকে তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার বলা হয়।
কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় বিপ্লব ঘটে মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে। ১৯৭১ সালে আমেরিকার ইন্টেল নামক কোম্পানি সর্বপ্রথম মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করে। মাইক্রোপ্রসেসর হচ্ছে এক বর্গইঞ্চি মাপের অতি অল্প আয়তন বিশিষ্ট সিলিকন নামক পাতে হাজার হাজার ট্রানজিষ্টর সন্নিবেশিত একটি যন্ত্রাংশ। মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহার করে কম্পিউটার তৈরি করায় কম্পিউটারের আয়তন ছোট একটি ১০/১২ ইঞ্চি টেলিভিশনের সমান হয়ে যায়। ফলে দাম কমে যায়, ব্যবহারের সুবিধা বেড়ে যায় এবং কজের ক্ষমতা হাজার হাজার গুণ বেড়ে যায়। মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে তৈরি কাম্পউটরকেই আধুনিক মাইক্রোকম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটার বলা হয়।
কম্পিউটারের শ্রেণী বিভাগঃ
আকৃতি, মূল্য, সংরক্ষণ ক্ষমতা, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও কার্য সম্পাদন এবং ব্যবহারের সুবিধা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে।
আকৃতিগত দিক থেকে কম্পিউটারকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ভাগগুলো হলঃ
১। সুপার কম্পিউটার
২। মেইনফ্রেম কম্পিউটার
৩। মিনি কম্পিউটার
৪। মাইক্রো কম্পিউটার
১) সুপার কম্পিউটারঃ আকৃতিগত দিক থেকে সর্ববৃহৎ এই কম্পিউটারের তথ্য সংরক্ষণ ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা অত্যন্ত শক্তিশালী ও দ্রুত গতি সম্পন্ন। বিপুল প্রক্রিয়াকরণের কাজে ব্যবহৃত অধিক ব্যয়বহুল এই কম্পিউটার সাধারণত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে ব্যবহ্রত হয়।
২) মেইনফ্রেম কম্পিউটারঃ সুপার কম্পিউটারের চেয়ে ছোট কিন্তু অন্যান্য কম্পিউটারের চেয়ে বড় এ ধরনের কম্পিউটার একই সঙ্গে অনেকগুলো গ্রহণ মুখ / নির্গমন মুখ সরঞ্জাম এবং অনেক রকম সহায়ক স্মৃতির সাথে সংযোগ করে কাজ করতে পারে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কম্পিউটারের ব্যবহার দেখা যায়।
৩) মিনি কম্পিউটারঃ মাঝারি ধরনের এ শ্রেণীর কম্পিউটারকে একটি সাধারণ টেবিলে বসানো সম্ভব। এ শ্রেণীর কম্পিউটারেও টার্মিনালের মাধ্যমে ব্যবহারকারী কাজ করতে পারে। এ ধরনের কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের জন্য সাধারণত একক বোর্ড বিশিষ্ট বর্তনী ব্যবহ্রত হয়। সাধারণত ব্যাংকের হিসাব সংক্রান্ত কাজে এ শ্রেণীর কম্পিউটার ব্যবহ্রত হয়।
৪) মাইক্রো কম্পিউটারঃ বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় এ ধরনের কম্পিউটারগুলো আকৃতিগত দিক হতে ছোট এবং দামেও খুব সস্তা। কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ হিসেবে এর ব্যবহার মাইক্রো কম্পিউটারের প্রধান বৈশিষ্ট্য। অফিসিয়াল কাজে ব্যাহার ছাড়াও গৃহস্থালী কাজ, খেলাধূলা ও চিত্ত বিনোদন এবং ব্যক্তিগত কাজে এ ধরনের কম্পিউটারের ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে। এ জন্য এ শ্রেণীর কম্পিউটারকে পি.সি বলা হয়। ব্রিফকেইজ ও ছোট বইয়ের আকারেও বর্তমানে এ ধরনের কম্পিউটার পাওয়া যায়।
মাইক্রো কম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটারকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথাঃ
ক) সুপার মাইক্রো
খ) ডেস্কটপ
গ) ল্যাপটপ
ক) সুপার মাইক্রোঃ সুপার মাইক্রো কম্পিউটার সবচেয়ে শক্তিশালী মাইক্রোকম্পিউটার। এর আরেক নাম ওয়ার্ক ষ্টেশন। এ
শ্রেণীর কম্পিউটারের ক্ষমতা মিনি কম্পিউটারের কাছাকাছি বিধায় এগুলো মিনিফ্রেমের স্থান দখল করে নিচ্ছে।
খ) ডেস্কটপঃ এ শ্রেণীর কম্পিউটার সহজেই একটি ডেস্ক এর উপর রাখা যায় বলে এগুলোকে ডেস্কটপ কম্পিউটার বলা হয়।
গ) ল্যাপটপঃ ডেস্কটপ কম্পিউটার অপেক্ষা ক্ষুদ্র কম্পিউটারগুলো ল্যাপটপ নামে পরিচিত। এগুলো দেখতে ছোট এ্যাটাচি
কেসের মত ও বহণযোগ্য এবং কাজ করার সময় কোল এর উপর রেখে কাজ করা যায় বলে এগুলোকে বলা হয় ল্যাপটপ।
কম্পিউটারের ব্যবহারঃ
বর্তমান বিশ্ব কম্পিউটার নির্ভর। কম্পিউটার ছাড়া উন্নত ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন, গবেষণা, টেলিযোগাযোগ, প্রকাশনা কল্পনা করা যায় না। কম্পিউটারকে ব্যবহার করা যায় সকল কাজে, সকল স্থানে। মূলতঃ মানুষ তার কাজের উন্নয়নের জন্য কম্পিউটারকে কাজে লাগায়। এর ব্যবহারে প্রতিটি কাজ হয়ে পড়ে নিভর্’ল ও গতিশীল। তাই দিন দিন কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। নীচে কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার উলেখিত হলো।
অফিস ব্যবস্থাপনায়:
অফিসের যাবতীয় কাজ যেমন লেটার ড্রাফটিং, ডকুমেন্ট প্রস্তুতকরণ ও এডিটিং, সর্টহ্যান্ড মেইলমার্জ, ওয়ার্কশীট তৈরি, ক্রয়-বিক্রয় হিসাব, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতনের হিসাব, বাজেট তৈরি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটারের ব্যবহারে একটি অফিস বা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক চিত্র বদলে যায়। হাজার হাজার ফাইলের তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষিত রাখা যায়। প্রতিটি কাজ স্বল্প ব্যয়ে এবং অতি কম সময়ে সম্পাদিত হয়।
শিল্প ক্ষেত্রেঃ
পদার্থের পরিমাণ ও মান নিয়ন্ত্রণ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, তরল পদার্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রন, বিভিন্ন ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, পদার্থের ডিজাইন তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। শিল্পোন্নত দেশগুলো কল-কারখানাসমূহ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চলে থাকে। তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহে তাদের কল-কারখানাসমূহ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চালু করার চেষ্টায় রত।
মুদ্রণ শিল্পেঃ
কম্পিউটারের ব্যবহার যে শিল্পের আমূল পরিবর্তন এনেছে সেটি হচ্ছে মুদ্রণ বা প্রকাশনা শিল্প। সনাতন পদ্ধতির লেটার প্রিন্টিং আজ বিলুপ্তির পথে। সেস্থান দখল কনে নিয়েছে কম্পিউটার কম্পোজ। কম্পিউটার কম্পোজের বদৌলতে রাতারাতি প্রকাশনা জগতে বিপ্লব ঘটে যায়। খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন ও বই-পুস্তকের প্রকাশ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। কম্পিউটারে বাংলা, ইংরেজী, আরবীসহ বিভিন্ন ভাসায় ওয়ার্ড প্রসেসিং, কম্পোজ, ড্রাফটিং, স্কেচিং, অঙ্কন, নকশা তৈরি ইত্যাদি কাজ সহজে, দ্রুতগতিতে ও স্বল্পব্যয়ে সমাধা করা যায়।
শিক্ষাঙ্গনেঃ
পাঠদান, পাঠগ্রহণ, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন, প্রশাসনিক কাজ, লাইব্রেরীর যাবতীয় কাজ, ফলাফল প্রণয়ন, টেবুলেশনশীট,
মর্কশীট ও সার্টিফিকেট তৈরি ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে ব্যাপকভাবে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। বস্তুতঃ শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার ছাত্র,
শিক্ষক, পরীক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষা-কর্মকর্তা, লাইব্রেরীয়ান প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য। ই-মেইল ও সিডিরম ভিত্তিক দারাবাহিক
শিক্ষা কোর্স ও বই-পুস্তক শিক্ষা প্রসারে ব্যাপকভাবে সহায়ক। কম্পিউটারের কারণে অতিদ্রুত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা যায়।
প্রাথমিক চিত্র, ভ’মন্ডল ও নভোঃমন্ডলের সচিত্র বর্ণনা ইত্যাদি বিভিন্ন শিক্ষার বিস্তারে কম্পিউটার অতি সুচারুরূপে করতে
পারে।
যোগাযোগ ব্যবস্থায়:
বিভিন্ন যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক কন্ট্রোল, রেল-বিমানের সময়সূচী ও টিকেট বুকিং, মালামাল নিয়ন্ত্রণ, জাহাজের দিক, গতি, অবস্থান নিয়ন্ত্রণ এককথায় পুরো জল-স্থল-আকাশপথের ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল সিস্টেমই কম্পিউটারের হাতে। একটি উন্নত দেশের সকল যোগাযোগ ব্যবস্থাই কম্পিউটার নির্ভর।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে:
প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরী, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, অপটিক্যাল সেন্টার, হাসপাতাল, ক্লিনিকে কম্পিউটারের ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন রোগীদের ফাইল প্রণয়ন, রোগের লক্ষণ নির্ণয়, ঔষধ নির্বাচন, বার্ধক্যের কারণ নির্ণয়, চক্ষু পরীক্ষা, প্যাথলজিক্যাল টেস্ট, রক্তের তালিকা প্রণয়ন, হাসপাতালের নার্স-ডাক্তারদের সময়সূচী ইত্যাদি ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
গবেষণায়ঃ
যে কোন গবেষণায় কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত থাকে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা কম্পিউটার ছাড়া বর্তমানে চলতেই পারে না। সামাজিক, রাজনৈতিক, দার্শনিক বিষয়ে কোন বিশ্লেষণাত্মক রচনা বা থিসিস প্রণয়নে কম্পিউটার অপরিহার্য। পদার্থ রসায়ন, জীববিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান , ধাতব বিজ্ঞান, গণিতশাস্ত্র, পরিসংখ্যান বিদ্যা, ইতিহাস বিদ্যাসহ সকল বিষয়েই কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটারের মাধ্যমে জটিল ও সূ² গণিতিক সমস্যার সমাধান ও জটিল সমস্যার সমাধানের কাজ সহজে ও দ্রুতগতিতে করা যায়। একজন গবেষক তিনি যে বিষয়েই হোন না কেন তার সাথে কম্পিউটার থাকা অপরিহার্য। খাদ্য গবেষণাগারে, নদী গবেষণা কেন্দ্র, পেট্রোলিয়াম গবেষণা কেন্দ্র, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সেন্টারে কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
ব্যাংকিং জগতেঃ
উন্নত ব্যাংকিং সেবা বলতে কম্পিউটার ভিত্তিক সেবাকেই বুঝায়। ফলে যে সব ব্যাংক ব্যাপক উন্নত গ্রাহক সেবা প্রদানের অঙ্গীকার নিয়ে আসে সেগুলো তাদের ব্যাংকিং সিস্টেমকে কম্পিউটার নির্ভর করে গড়ে তোলে। গ্রাহকের একাউন্ট নম্বর, ব্যালেন্স, ডেভিড, ক্রেডিট, স্টকের পরিমাণ, প্রিমিয়াম, প্রাইজবন্ড, ইন্সুরেন্স-এর মতো সকল কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। প্রতিদিনের লেনদেন কম্পিউটারে রক্ষিত হয় এবং দিনশেষে হিসাব-নিকাশ কম্পিউটারে করা হয়। প্রতিটি ব্যাংক শাখা কম্পিউটার যোগাযোগের মাধ্যমে হেড অফিসের সাথে সংযুক্ত থাকে।
আদালতঃ
আদালতে বিভিন্ন মামলার তথ্য সংরক্ষণ, মামলার রায় সংরক্ষণ, সাক্ষীদের বক্তব্যের গুরত্বপূর্ন দিক ও রেফারেন্সের সমন্বয় সাধনসহ আদালতের যাবতীয় কাজ কম্পিউটারের দ্বারা সমাধা করা যায়। ফলে লক্ষ লক্ষ ফাইলের স্তুুপে যে কাগজ স্থান ও সময়ের অপচয় ঘটে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিশ্বের প্রধান প্রধান মামলার বিবরণ, রেফারেন্স, সংবিধানের বিভিন্ন ধারা কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে তার উপযুক্ত মাধ্যমে যে কোন মামলার কাজ ত্বরান্বিত করা যায়। কম্পিউটারের ব্যবহারের মাধ্যমে ঝুলে থাকা লক্ষ লক্ষ কেসের নিষ্পত্তি করা দ্রুত গতিতে সম্ভব।
সামরিক ক্ষেত্রেঃ
বর্তমান বিশ্বে আধুনিক সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত অধিকাংশ যুদ্ধাস্ত্র ও বিমান কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত। ক্রুশ, স্যাম বা পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র, সাবমেরিন, এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার, ডেস্ট্রয়ার-এর কন্ট্রোল সিস্টেম, যুদ্ধ বিমানের নিয়ন্ত্রণ, রাডার ব্যবস্থাপনা সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণেই কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। আধুনিক সেনাবাহিনীর পরিচালনা, যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মূলে রয়েছে এই কম্পিউটার।
অর্থবাজারেঃ
ব্যবসা শিল্প প্রতিষ্ঠানে অর্থ বিনিয়োগ প্রক্রিয়া, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, আর্থিক নিরাপত্তা বিশ্লেষণ, ঋণের মূল্যায়ন, শেয়ার মালিকানা ও বাজার গবেষণা, শেয়ারের ওঠা-নামা, লেনদেন ঋণের পরিমান নির্ণয়, প্রিমিয়াম হিসাব ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার ব্যাপকভবে ব্যবহৃত হয়।
বিলিং সিস্টেমেঃ
দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিলিং সিস্টেম অত্যাধিক জটিল আকার ধারণ করলেও কম্পিউটার এতে স্বস্তি এনে দিয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ দেশেই টেলিফোন, বৈদ্যুতিক গ্যাস, পানি, মিউনিসিপাল- এর বিলের কাজ কম্পিউটারে করা হয়। এছাড়া মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের বিবিধ ট্যাক্স, হাউজ বিল্ডিং এর ট্যাক্স সিস্টেমও কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত। কম্পিউটার সিস্টেমে বিলিং পদ্ধতি হাতে করা বিলের তুলনায় অনেক শুদ্ধ ও দ্রুতগতির।
কৃষি ক্ষেত্রেঃ
উন্নত বিশ্বে কৃষিকাজে কম্পিউটার অধিকহারে ব্যবহৃত হয়। কোন্ জমিতে কতটুকু সার লাগবে, ভ’মির উর্বরতা কেমন, কিভাবে কত সংখ্যক বীজ বপন করা হবে, কত সময়ে ফসল উৎপন্ন হবে, বৎসরের কোন্ কোন্ সময়ে কোন্ কোন্ ফসল উৎপন্ন হবে ইত্যাদি তথ্য বিন্যাস ও ব্যবহারে কম্পিউটার সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সংস্কৃত ও বিনোদনেঃ
বিনোদন জগতে কম্পিউটারের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। রেডিও, টেলিভিশন, চলচিত্রে কম্পিউটার নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিজ্ঞাপন চিত্রে বর্তমানে কম্পিউটার গ্রাফিক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। স্যাটেলাইট টেলিভিশনে বিভিন্ন কম্পোজিশন কম্পিউটারে তৈরি। বিভিন্ন বিনোদনমূলক সফ্টওয়্যাারে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। কম্পিউটার গেমস কম্পিউটার মিউজিক, সিডি রমের সাহায্যে ছবিসহ গান ইত্যাদির জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে।
তথ্য পরিসংখ্যানেঃ
তথ্য পরিসংখ্যানে কম্পিউটারের বিকল্প নেই। ভ’মিকম্প, জলোচ্ছ¡াস, জন্ম-মৃত্যুর হার, জিডিপি, জি এনপি, প্রজনন হার, আমদানী-রফতানীর হার, শিক্ষার হার, বিভিন্ন ধর্মের লোকসংখ্যার পরিমাণ, লোকসংখ্যা, আয়তন ইত্যাদি বিভিন্ন পরিসংখ্যানে কম্পিউটার অপরিহার্য। কম্পিউটারে ডেটা সংরক্ষণ ও দ্রুত ফলাফল প্রণয়ন করেই বিশ্বের বিভিন্ন তথ্য মিডিয়া বা মাধ্যমসমূহ এক তথ্য বিপ্লবের সূচনা করেছে।
ডিজাইনেঃ
মিজাইল, ট্যাংক, সাবমেরিন, এয়ারক্রাফট, এয়ারবাস, জাহাজ, গাড়ীর ডিজাইন কম্পিউটারে নিখুঁতভাবে করা যায়। সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন অস্ত্রের ডিজাইন, পোশাকের ডিজাইন সামরিক ট্রাকের ডিজাইন তৈরিতে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। বাড়ী, অফিস, প্রতিষ্ঠান, কারখানা, রাস্তা, কালভার্ট, ব্রীজ, ষ্ট্যাচু, মিনার, স্মৃতি স্তম্ভ, টাওয়ার ধর্মীয় গৃহসহ বিভিন্ন প্রকার ডিজাইনের কাজ আর্কিটেক্চার ও সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা কম্পিউটারে করে থাকেন। বর্তমানে উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন কাপড়ের ফ্যাশন ডিজাইন ও ক্রেতাদের অর্ডারকৃত নির্দিষ্ট ফ্যাশন ডিজাইন কম্পিউটারের সাহায্যে করা হয়।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসেঃ
বর্তমান কালে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ কম্পিউটারের সাহায্যে হিসাব করেই দেয়া হয়। আবহাওয়া মন্ডলের তাপ, চাপ, বাতাসের গতি, দিক, ঘূর্ণন, সমুদ্রের পানির ঘূর্ণন, উর্ধ্বচাপ, নিম্নচাপ, উর্ধ্বগতি, পার্শ্বগতি, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, মেঘ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পরিমাণ নির্ণয়ের কাজ এখন কম্পিউটারে করা হয়।
এক কথায় কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় সর্বত্র। আমাদের জীবনযাত্রা কম্পিউটার ভিত্তিক। বাসার পড়ার ঘর, ভিডিও লাইব্রেরী, অফিস, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, হোটেল থেকে শুরু করে মহাকাশ, নভোঃমন্ডলের গবেষণা ও নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত প্রতিটি স্থানেই কম্পিউটারের ব্যবহার দিন দিন অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়ে চলেছে।